মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ দেশকে জানতে এবং জানাতে প্রতিনিয়ত ইত্যাদি যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কখনও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে, কখনও ইতিহাস-ঐতিহ্য, কখনওবা শেকড়ের সন্ধানে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঝালকাঠিতে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে ঝালকাঠির ধানসিড়ি, সুগন্ধা, বিষখালী, বাসন্ডা, গাবখান-এই পাঁচ নদীর মোহনায়। ধারণ করা হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপলক্ষে ঝালকাঠিতে ছিল উৎসবের আমেজ। দর্শকদের বাঁধভাঙা জোয়ারে পুরো মাঠই ছিলো দর্শকপূর্ণ। স্থানীয়রা জানান, ইতোপূর্বে ঝালকাঠিতে কখনও কোন অনুষ্ঠানে এত দর্শক সমাগম হয়নি। কর্দমাক্ত ও অপ্রশস্ত রাস্তা ছিলো গাড়ি চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত। তাই দর্শকদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে হয়েছে। হেঁটে আসার কষ্ট, ভাপসা গরম এবং বৃষ্টির ঝুঁকি থাকা সত্তেও দর্শকরা ছিলেন স্বতঃস্ফর্ত। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে সেদিন বর্ণিল আলো এবং ঝালকাঠির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো দৃষ্টি নন্দন মঞ্চে ইত্যাদির ধারণ অনুষ্ঠান চলে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মত ইত্যাদির বিভিন্ন নান্দনিক পর্ব দেখার পাশাপাশি অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন একটি ভালো অনুষ্ঠান করতে হলে কতটা শ্রম দিতে হয়। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিলো হাজার হাজার দর্শকের উচ্ছাসপূর্ণ চিৎকার আর তালি বৃষ্টি। জন্ম এবং মৃত্যু এক সূত্রে গাঁথা এক অভিন্ন চেতনার নাম। এবারের অনুষ্ঠানে এই বিষয়ের উপরেই একটি দ্বৈত সংগীত গেয়েছেন এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও শফি মন্ডল। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি। রয়েছে ঝালকাঠির নদী ও গৌরবগাঁথা নিয়ে একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচ। গানটির কথা লিখেছেন গীতিকবি মনিরুজ্জামান পলাশ, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি, নৃত্য পরিচালনা করেছেন দেবাশীষ সেন গুপ্ত।
শেকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে ঝালকাঠির ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দর্শনীয় স্থান, নদী-খাল-চ্যানেল, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য এবং কীর্তিমান ব্যক্তিদের উপর কয়েকটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। আঘাতজনিত কিংবা বিকলাঙ্গ রোগীদের ব্যতিক্রমধর্মী ইলিজারভ চিকিৎসা পদ্ধতির উপর রয়েছে একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। অজানা-অচেনা-দূরদূরান্তের পথিকদের জন্য নীলফামারীর একজন মহান ব্যক্তির নির্মিত একটি মুসাফিরখানার উপর রয়েছে একটি দৃষ্টান্তমূলক প্রতিবেদন। রয়েছে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরের এক সময়ের রিকশাচালক জনাব সৈয়দ আহমেদের উপর একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। ইত্যাদিতেই প্রথম শুরু হয় বিদেশি প্রতিবেদন শিরোনামে বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয় ও স্থানের উপর প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে আমেরিকার মিনেসোটা রাজ্যের উপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ঝালকাঠিকে নিয়ে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। যাত্রা প্রিয় এই ঝালকাঠিতেই দেড়শত বছর আগে প্রথম নাথ ও নট্ট নামে বাংলার শ্রেষ্ঠ দুটি যাত্রা দলের যাত্রা শুরু হয়। তাই দর্শক পর্বের দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের জন্য বিষয় নির্বাচন করা হয়েছিলো যাত্রাভিনয়।
ঝালকাঠির মঞ্চে এবার নাতি এবং ভাগ্নেকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি নানী এবং মামাকে। সাথি হারা নাতি এবং মামা ছাড়া ভাগ্নে কি করেছে এবারের ইত্যাদিতে, দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে অনুষ্ঠান প্রচারের দিন পর্যন্ত। নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষনাট্যাংশ। সংস্কৃতির সুস্থ ধারাকে অসুস্থ করার প্রতিযোগিতা, ভার্চুয়াল প্রভাবে অ্যাকচিউয়্যাল অবস্থা, চিত্ত প্রশান্তির প্রত্যাশা, শাড়ি নিয়ে সাংসারিক দ্বদ্ব, হৃদয়ছোঁয়া শিল্পী বনাম তালি ভিক্ষা চাওয়া শিল্পী, জন্মদিনে শোক পালন, প্রচারলোভী ডিজিটাল নেতা, উপেক্ষিত জনতার পক্ষে ক্ষোভসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান কিসলু, সুভাশিষ ভৌমিক, বড়দা মিঠু, কামাল বায়েজিদ, আবু হেনা রনি, জিল্লুর রহমান, আমিন আজাদ, মামুনুল হক টুটু, বিলু বড়–য়া, জাহিদ শিকদার, আনোয়ার শাহী, নিপু, আনন্দ খালেদ, তারিক স্বপন, সাবরিনা নিসা, জামিল হোসেন, লাভলী ইয়াসমিন, আনোয়ারুল আলম সজল, সাজ্জাদ সাজু, সিলভিয়া কুইয়া, মতিউর রহমান, মোনালিসা দীপা, সুর্বনা মজুমদার, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ বারী, জাহিদ চৌধুরী, হৃদয় আল মিরু, দেবাশিষ মিঠু, সোহাগ আনসারীসহ আরো অনেকে। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।