মোঃ নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির রাজাপুরের চল্লিশ কাহনিয়া ও বাদুরতলায় এলাকায় ভোররাতে মা ইলিশ নিধনে নামে জেলেরা। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগ রাতে অভিযান চালিয়ে ভোর রাতের দিকে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই সুযোগ ব্যবহার করে জেলেরা। এখানকার জেলেরা এতোটাই লোভী ও বেপরোয়া যে তারা জেল, হুলিয়া কোনটাই মানেন না। ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় জানান, আমার বাড়ি চল্লিশ কাহনিয়া এলাকায়। ওখানকার জেলেরা আমাকে ডিমওয়ালা ৮শ গ্রাম/১কেজি ওজনের ইলিশ ৪শ টাকা দরে দিবে বলে ফোন দিয়েছে। আমি তাদের কথায় সাড়া দেই নাই। আইনজীবী হয়ে লোভে পড়ে আইন অমান্য করার পক্ষে না বলেও জানান তিনি। কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, ভোররাতে জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকারে নামে। সকাল সকাল আবার তারা তীরে ওঠে। ইলিশ ধরার নৌকা মূল নদীর পাশের ছোট খালে নিয়ে রেখে সেখানে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ব্যাগে অথবা বিভিন্ন কার্টুনে করে বিভিন্ন উপায়ে অগ্রিম বুকিং দেয়া ক্রেতাদের কাছে সুযোগ বুঝে পৌছে দেয়। ওষুধের বাক্স, সিলিং ফ্যানের বাক্সসহ বিভিন্ন অভিনব পদ্ধতির কৌশল ব্যবহার করে তারা মাছ বাজারজাত করছে। খোঁজ নিয়ে আরো জানাগেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ঝালকাঠির নলছিটিতে চলছে মা ইলিশ নিধন। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে চলছে মা ইলিশ শিকার। স্থানীয় শতাধিক জেলে প্রতিদিন নদীতে শিকার করছেন। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। রাতের অন্ধকারে জেলেরা অবাধে মা ইলিশ ধরছে। উপজেলার সুগন্ধা নদীর সরই, মাটিভাঙ্গা, ফেরিঘাট, নাইয়াপাড়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, দপদপিয়া পুরাতন ফেরিঘাট ও বিষখালী নদীর দেউরী, ভেরনবাড়িয়া, নলবুনিয়া, ভবানীপুর এলাকায় শত জেলে উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ শিকার করছে বলে জানাগেছে। তাদের নেই কোন আতঙ্ক। যদিও সরকারিভাবে ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে না যেতেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলাকায় কয়েক মণ ইলিশ শিকার করে কৌশল অবলম্বন করে গোপনে বিক্রি করছে। স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও এক শ্রেণির লোভী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরছে। সকাল ১০টায়, দুপুর ৩টায়, রাত ১০টায় ও ভোর ৪টায় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে এ মা ইলিশ নিধন করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় ৩টি ভাগে ভাগ হয়ে সিন্ডিকেট করে পাহাড়া বসিয়ে মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ১০টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত) ৯টি আভিযানিক দল ৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৯৫কেজি ইলিশ ও সাড়ে ৩হাজারেরও বেশি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। ২টি মামলায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। মা ইলিশ নিধনের নিষেধাজ্ঞা সময়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত (মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত), ১০২টি মোবাইল কোর্ট, ১১৩টি অভিযান, ৪২৯কেজি ইলিশ ও প্রায় ২৭হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ, ৪১টি মামলায় ৩২জনকে জরিমানা বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদানসহ জরিমানা ও নৌকাও জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয় এতিমখানায় মাছ বিতরণ ও জনসম্মুখে জব্দকৃত কারেন্টজাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঝালকাঠি প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জোহর আলী জানান, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোন জেলেকে নদীতে মা ইলিশ ধরতে দেখলে তাকে কোন রকম ছাড় দেয়া হয়নি, আর হবেও না।