মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চুকে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
বুধবার বেলা ১২ টায় রাজধানীর নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে। ঐ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. রাশেদ কবির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আখতারুজ্জামান বাচ্চুকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেখানকার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল বারী।
অন্যদিকে আ’লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চুর অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মূহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ঝালকাঠি ও নলছিটির সাধারন মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনসহ সর্বমহলে ব্যাপক
আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারী রাজধানী খিলগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষক চেয়ারম্যান বাচ্চু ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে ধর্ষনের শিকার তরুনী (১৯) নিজে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে।
কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই নিবাসী দরিদ্র কৃষকের সন্তান নির্যাতিত তরুনীনলামিয়া আক্তার বর্তমানে পরিবারসহ ঢাকার ফতুল্লাহ বসবাস করে লোখাপড়ার পাশাপাশি নারায়নগজ্ঞের একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করছিল। প্রায় ৭/৮মাস পূর্বে নলছিটি উপজেলা আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুলকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর তার ইমুতে ফোন করে। বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে তার নিজের একটি বড় এনজিও রয়েছে জানিয় এবং সে চাইলে একই ইউনিয়নের মেয়ে হিসাবে তাকে একটা ভালো চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে বলে।
চেয়ারম্যান বাচ্চুর কথা অনুযায়ী সরল বিশ্বাসে সে কাগজপত্র নিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ইং তারিখ বিকালে তাকে ঢাকার গুলিস্থানে দেখা করলে হেড অফিসে নেয়ার কথা বলে একটি প্রাইভেট কারে উঠিয়ে দঃ বনশ্রী ৯/২ নাম্বার রোডের ব্লক-ই, বাসা নং-১২৩ (পারোয়ারী বাড়ী) নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থানরত
মোর্সেদা বেগম নামে এক নারীর সহায়তায় চেয়ারম্যান বাচ্চু তাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে ও ভিডিও চিত্র ধারন করে কোন বাড়াবাড়ি করলে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলে ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে।
পরবর্তীতে গত ৬ জানুয়ারী নারীলোভী চেয়ারম্যান বাচ্চু ফোন করে পুনরায় সেই বাসায় আসতে বলে অন্যথায় আজকেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবো বলে ভয় দেখালে নিরুপায় হয়ে সেই বাসায় গেলে সেখানে আটকে সারারাত উপোর্যুপুরী ধর্ষন করে ৭ জানুয়ারী সকালে সেখান থেকে একই হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয় দফায় ধর্ষনের কয়েক দিন পর নির্যাতিতা তরুনী অন্ত;স্বত্তা হয়ে পড়লে বিষয়টি চেয়ারম্যান বাচ্চু কে জানানোর পর তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গর্ভপাত করান।
এরপর থেকে বিয়ের জন্য অনুরোধ করলে সে নানারকম ছলচাতুরী শুরু করে পুনরায় তাকে সেই বাসায় দেখা করার জন্য জোড়াজুড়ী শুরু করে। বাধ্য হয়ে অসহায় তরুনী পরিবারের কাছে পুরো ঘটনা জানিয়ে গত ১০ফেব্রুয়ারি রাজধানী
খিলগাঁও থানায় আ’লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম আক্তারুজ্জামান বাচ্চু ও সহযোগী মোর্শেদা বেগমের (৩৫) বিরুদ্ধে ধর্ষন ও গর্ভপাতের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (নং-২২/১১২) দায়ের করেন।
কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চুর বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১)/৩০ ধারায় একটি মামলা চলমান ছিলো।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুকুল আলম বলেন, চাকরি ও বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন করার অভিযোগে বাচ্চুর বিরুদ্ধে গত ১২ জানুয়ারি এক কিশোরী মামলাটি দায়ের করেছিলো।
মামলার পরে চেয়ারম্যান বাচ্চু বেশ কিছুদিন পলাতক থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় আসেন। উচ্চ আদালতের বেধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই বুধবার নিম্ম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৭ থেকে ৮ মাস আগে বাচ্চুর সঙ্গে ওই নারীর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয় সূত্রে ওই নারীকে ঢাকায় চাকরি দেবে এবং বিয়ে করবে বলে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ বনশ্রীর একটি বাসায় ঢাকায় নিয়ে আসেন। ওইদিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামলার ২নং আসামির দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায় নিয়ে আসেন।
বাচ্চু নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের তিনবার আওয়ামী লীগের মনোয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে কুলকাঠি চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পাশাপাশি নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নলছিটি উপজেলা প্রতিনিধি ও নলছিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।