সাজ্জাদুর রহমান জয়পুরহাট থেকেঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যখন স্বশরীরে পরিক্ষায় অংশগ্রহন, অনলাইনে ক্লাশ সহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে, তখনও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে ধীরগতিতেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা চরম বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার হয়ে (দুর্ভোগের মধ্যে) দিশেহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বিশেষ করে ডিগ্রি কোর্সের শিক্ষার্থীরা এখানে সবচেয়ে বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে প্রতিয়মান। যেগুলো দেখার মতো কেউ নেই বললেই চলে।
এমনই একটি ব্যাচ হচ্ছে, মাস্টার্স শেষ পর্ব ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (২০১৯ সালের) শিক্ষার্থীবৃন্দ, যাদের মূলত পরিক্ষা হবার কথা ছিল, মাস্টার্স শেষ পর্ব ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ হিসেবে ২০১৭ সালেই। তাদের চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হবার উপক্রম হলেও এখোনো মাস্টার্স কোর্স সমাপ্ত হয়নি সেশন জটের কারণে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিভিন্ন গবেষণা এবং অনুসন্ধানী তথ্যের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, অত্র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালে এইচ এস সি পাস করার পর ডিগ্রি তে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালের ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ার ব্যাচ হিসেবে তাদের ডিগ্রি কোর্স মূলত সমাপ্ত হয়। সেই হিসেবে ২০১৬ তে মাস্টার্স ১ম পর্ব এবং ২০১৭ তে মাস্টার্স ফাইনাল শেষ হবার কথা থাকলেও যেহেতু তাদের ডিগ্রি পরিক্ষা শেষ হয়েছিল ২০১৭ তে এবং ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল ২০১৮ সালে। অর্থাৎ এখানে ২বছর তাদের শিক্ষাজীবন থেকে আগেই হারিয়ে গিয়েছে। এভাবে তারা ২০১৫ সালের ব্যাচ হিসেবে স্নাতক পাশ করার পরে এখন ৬বছর পর ২০২১ সালে এসেও তাদের স্নাতকোত্তর কোর্স সমাপ্ত হয় নি। বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের সাথে তাদের যুক্ত করার পরেও সেশনজট নিরসন হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী আমার কাছে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন,”আমরা ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করি এবং ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে পুরাতন সিলেবাসের আওতায় ২০১৫ সালের পরিক্ষা ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়ে ২০১৮ সালে ফলাফল প্রকাশ হয়। তারপর যেহেতু আমাদের প্রিলিমিনারী টু মাস্টার্স (মাস্টার্স ১ম পর্ব) পরিক্ষা শেষ হবার কথা ছিল ২০১৬ সালে, তা না করে সেশন জটের জন্য ২০১৬ সালে (নতুন সিলেবাসে) ডিগ্রি পাশ করা জুনিয়র ব্যাচের সাথে তাদের প্রিলিমিনারী টু মাস্টার্স শিক্ষাবর্ষে যুক্ত করা হয় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ হিসেবে এবং ২০১৭ সালের সেই পরিক্ষা নেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে। এখানে সরাসরি আমরা একটা বছর হারিয়ে ফেললাম। আবার দুটি ব্যাচ কে এভাবে একত্রিত করার পরেও ভয়াবহ সেশনজট লেগেই থাকে। কেননা ঘটনা তো এখানেই শেষ নয়।
সেশনজট হলেও ২০১৭ ব্যাচ হিসেবে আমাদের মাস্টার্স ১ম পর্ব শেষ হয় এবং তারপর ২০১৮ সালে আমাদের মাস্টার্স ফাইনাল তো অন্তত সমাপ্ত হবার কথা তাই না? কিন্তু এখানেও ২০১৭-১৮ মাস্টার্স ফাইনাল দের সাথে আমাদের ভর্তি না করিয়ে বসিয়ে রেখে ২০১৮-১৯ ব্যাচ (আরো জুনিয়র) দের সাথে ভর্তি করানো হয়েছে। ২০১৮-১৯ ব্যাচে মূলত অনার্সের যেসব শিক্ষার্থীরা রয়েছে, তারা ২০১৪ তে এইচএসসি পাশ করছিল। আবার ২০১৮ মাস্টার্স ফাইনাল পরিক্ষার্থীরা ছিল ২০১৩-১৪ অনার্স ব্যাচের (তাদের এইচএসসি ২০১৩) যারাও বয়সে আমাদের জুনিয়ন ছিল। ডিগ্রিতে পড়াশুনার কারণে এভাবে কতোগুলো বছর আমদের জীবন থেকে হারিয়ে গেলো সেশন জটের নামে। এখন আবার ২০১৮ মাস্টার্স ফাইনাল ব্যাচ জুনিয়র হলেও তাদের পরিক্ষাগুলো বেশ কয়েকটা স্থগিত করে রাখা হয়েছে। তাহলে আমাদের জুনিয়ররা আগেই মাস্টার্স শেষ করে চাকুরীতে যাবে, আর আমরা বয়সে সিনিয়র হয়েও তাদের পরে ২০১৯ ব্যাচে মাস্টার্স ফাইনাল পরিক্ষাতে অংশগ্রহন করবো, তাতেও সমস্যা নাই। কিন্তু ২০২২ সালের মধ্যেও আমাদের মাস্টার্স ফাইনাল শেষ হবে কিনা, এটাই এখন প্রশ্ন। চাকুরীর বয়স তো আর থেমে নেই। তাই দ্রুত পরিক্ষা গ্রহনের পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।”
এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছেন, “সিনিয়র ব্যাচ হয়েও আমরা যারা পিছিয়ে পড়েছি, আমাদের ২০১৯ ব্যাচের পরীক্ষা তাহলে কখন হবে? সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমাদের বয়স তো আর থেমে নেই। মাস্টার্স শেষ হতে হতেই যদি বয়স ২৭-২৮ পার হয়ে যায়, তাহলে আমরা চাকুরীর জন্য প্রস্তুতি কখন নিবো? ৩০ বছর হলে তো চাকুরীতেও গ্রহনযোগ্যতা পাবো না। তাহলে আমরা ডিগ্রিতে পড়াশোনা করে কী খুব অন্যায় অপরাধ করেছি? তাহলে এমন বৈষম্য কেন? এই উত্তর কী আছে আপনাদের কাছে?” এমনটাই জানালেন তামহিদা আফরিন নামের এক শিক্ষার্থী।
আরেক শিক্ষার্থী কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “আমরা এব্যাপারে গোটা দেশের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং গ্রুপের মাধ্যমে এন.ইউ এর ভিসি মহোদয়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রার বরাবর ডাকযোগে শত শত চিঠি পাঠিয়ে এবং সবাই ফোনে যোগাযোগ করে অত্র সমস্যার কথা জানিয়েও আমরা কোনো সমাধান পাই নি। ২০১৫ সালের ব্যাচ হিসেবে আমরা ডিগ্রি (স্নাতক) পাশ করার পরে ২০২১ সালে এসেও আমাদের মাস্টার্স কোর্স সমাপ্ত হলো না সেশনজট এবং সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারনে। ২০২২ সালে গিয়েও আমাদের স্নাতকোত্তর কোর্স কমপ্লিট হবে কিনা, সন্দেহ আছে। তাহলে আমাদের শিক্ষাজীবনে (ডিগ্রি পাশ) ২০১৫ সালের পর থেকে এতোগুলো বছর নষ্ট হয়ে গেল, ৬-৭বছরেও মাস্টার্স কোর্স সমাপ্ত করতে পারলাম না। জুনিয়র রা চাকুরী তে ঢুকলেও আমরা মাস্টার্স কমপ্লিট না থাকার কারণে আবেদন করতে পাচ্ছি না এবং কোনো প্রাইভেট কোম্পানীর চাকুরীতেও ঢুকতে পাচ্ছি না। তাহলে কে নেবে এসবের দায়ভার?” এমনটাই জানিয়েছেন আক্তারুজ্জামান রকি নামে এক শিক্ষার্থী।
কিছুদিন আগে নতুন ভিসি মহোদয় যোগ দিয়েছেন। ২০১৮-১৯ মাস্টার্স ফাইনাল (এন,ইউ) ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবহেলিত এবং হতাশাগ্রস্ত ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরিক্ষা দ্রুত গ্রহনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সবিনয়ে আকুতি জানিয়েছেন।