সমুজ আহমদ সায়মন: শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি বা দেশ উন্নতির শিখঁরে আরোহন করতে পারেনা৷ জাতির উন্নতি ও সফলতা নির্ভর করে শিক্ষার ওপর। শিক্ষা এমনই এক শক্তি যা মানুষের অন্তরকে করে আলোকিত, বিবেককে করে জাগ্রত। এমনকি জীবন বিকাশের পথে সকল বাঁধা দুর করে সুন্দর সমাজ ও দেশ গঠনের পথ তৈরি করে। শিক্ষাই জাতিকে সামনে এগিয়ে চলার পথ তৈরি করে। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন পঙ্গু, তেমনি শিক্ষাহীন জাতিও পঙ্গু। মেরুদণ্ড যেমন মানুষকে সঠিকভাবে, সচলভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, তেমনি শিক্ষাও জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে সাহায্য করে। জাতিকে কর্মে বিকশিত করে তুলতে হলে দরকার শিক্ষা৷ আর শিক্ষা অর্জন করতে হলে দরকার মানসম্মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান। শিক্ষা প্রতিষ্টান মানুষের সমগ্র জীবনকে সুসংগঠিত,পরিচালিত, ও জীবনবোধকে উজ্জীবিত করে। জাগতিক ও পারলৌকিক উন্নতির সোপান শিক্ষায়। আর সেই সুবাদে সৎ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির মহৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্মুখে অগ্রসরমান একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান বিশ্বনাথের খাজাঞ্চিতে খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়।
আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় রেখে সৎ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষে ২০০৪ সালের ১লা জানুয়ারি বর্তমান ভূমি দাতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আলহাজ্ব আব্দুল হান্নানের নিজ বাড়িতে খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্টান ২০০৫ সালে তার নিজস্ব অবস্থানে এসে শিক্ষাকার্য পরিচালনা করে আজ অবধি সফলতার সাথে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে।
খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়টি সিলেট জেলার প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের হোসেন পুর গ্রামে খাজাঞ্চি ইউনিয়ন সংলগ্ন ছায়া সূনিবিড় পাখ পাখালির কল কাকলি মুখরিত খাজাঞ্চি- সিলেট সড়কের পাশে প্রায় তিন একর জমির উপর নৈসর্গিক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে সুদক্ষ, বিদ্যানূরাগী ও নিষ্টাবান পরিচালনা পরিষদ। বর্তমানে পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উক্ত একাডেমির ভূমি দাতা ও প্রতিষ্টাতা আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান। বিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসে স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। একাডেমীতে নিষ্টা ও যোগ্যতার সাথে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন গণেশ চন্দ্র দাশ। সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন রেশমা বেগম। বি এস সি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাহিদুর রহমান রহমান।
এছাড়াও একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য রয়েছে বহুমূখী কার্যক্রম। সেগুলো হলো;
সাপ্তাহিক আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, শিক্ষা সফর, খেলাধুলা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস সহ সব ধরনের দিবস পালন ইত্যাদি। সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এ বিদ্যালয়। আজ এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টার ষোল বছরে পা রাখছে।
খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে প্লে শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন’শর অধিক ছাত্র ছাত্রী লেখা পড়া করছে। শুধু মাত্র মানবিক বিভাগে প্রতি বছর প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন ছাত্র ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে অত্যন্ত সন্তোষজনক ফলাফল করছে। বৃত্তি সহ এ প্লাস নিয়ে বছরের পর বছর সুনামের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের লেখা পড়া। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রতি বছর ভালো ফলাফল করেছে ছাত্র ছাত্রীরা। গুনগত ও মানসম্মত উন্নত কারিকুলামে লেখা পড়া হচ্ছে বিধায় এ বিদ্যালয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে ভর্তি করতে দ্বিধাবোধ করেন না। প্রায় ১২ জন দক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে আসছেন।
প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্লে হতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়।
প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরিক্ষা ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরিক্ষার ফলাফল অত্র প্রতিষ্টানের সূচনা থেকেই সন্তোষজনক। নিম্নে কয়েকটি বছরের বোর্ড পরিক্ষার ভালো ফলাফল ও বৃত্তি প্রাপ্তদের উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো; পিইসিঃ ২০০৫ সালে প্রথম প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষা শুরু হয় এবং সেই পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে এই বিদ্যালয়।
২০১৬ সালে ১০ টি A+ সহ শতভাগ সফলতা অর্জন করে।
২০১৭ সালে হাসিমী বৃত্তি সহ সিলেট জেলা পর্যায়ে ৭ম শ্রেনিতে বৃত্তি লাভ করে উক্ত একাডেমীর ছাত্র মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান।
২০১৯ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের বৃত্তি লাভ ৪ টি।
২০১০ সালে প্রথম জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা। পরিক্ষায় ১৪ টি A +।
২০১৮ সালে A+ সহ উপজেলা পর্যায়ে বৃত্তি লাভ করে জাকিয়া বেগম,২০১৭ সালে খালেদা বেগম।
২০১৫ সালে A+ ৪ টি সহ শতভাগ সফলতা অর্জন করে এই বিদ্যালয়।
২০১২ সালে প্রথম এসএসসি পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জিত হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবকটি পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবাদে অত্যাধুনিক কম্পিউটারের যুগে বিশ্ব আজ প্রতিযোগীতা ও বিশ্বায়নের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়েছে।এ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতের বিশ্ব নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হলে ছাত্র ছাত্রী লেখা পড়ায় মনোযোগী হতে হবে এবং অভিভাবকও সচেতন হতে হবে। আর তাইতে উপযুক্ত যোগ্যতা নিয়ে উক্ত প্রতিযোগীতা, ঝড় ঝঞা মোকাবেলা করেই তার অভিষ্ট্য লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে।কঠোর পরিশ্রম, নিরলস সাধনা,উন্নত ও সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা, সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল চালিকাশক্তি।তাই আজ প্রতিষ্টার ষোল বছরে পা রাখায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন।