কৃষি নির্ভরশীল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল।কৃষি ও কৃষক বাংলার প্রাণ। একে অপরের পরিপূরক।অন্য কথায় একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার কিংবা বর্তমান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে ঐতিহাসিক তথ্য অবগত হবার আগে সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক বলতে কি বুঝায় সে সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক বলেই আমরা মনে করি।প্রাচীন ভারতের আর্য জাতির ভাষার নাম ছিল সংস্কৃত ভাষা। ব্যাপক বিশাল অর্থের ধারক বাহক সংস্কৃতি শব্দটাকে সে সংস্কৃত ভাষা থেকেই বাংলা ভাষায় গ্রহণ করা হয়েছে।অভিধান অনুসারে–সংস্কৃতি বলতে কৃষ্টি, সংস্কার, চিৎপ্রকর্ষ, বিশুদ্ধীকরণ, চর্চার মাধ্যমে বা সভ্যতার ফলে লব্ধ উৎকর্ষ, অনুশীলন দ্বারা লব্ধ বিদ্যা-বুদ্ধি, রীতি নীতি ইত্যাদির উৎকর্ষ, জাতির মানসিক বিকাশের অবস্থা বুঝিয়ে থাকে’।ইংরেজিতে যাকে কালচার নামে অভিহিত করা হয়েছে।সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান।আভিধানিক অর্থে ‘ঐতিহ্য’ বলতে যা বুঝানো তা হচ্ছে- পরম্পরাগত প্রথা বা কথা,পুরুষানুক্রমিক ধারা, কিংবদন্তি ইত্যাদি।‘যে কোন দেশে বা সমাজে অনেক দিন থেকে যা লালন করা হচ্ছে তা’-ই ঐতিহ্য বলে স্বীকৃত।সংস্কৃতিটা যখন ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হয় তখনই সে টা ঐতিহ্য।
আমি যখন লেখাপড়া করি তখন আমাদের পাঠ্য পুস্তকে ছিল এবং পড়তে হত অনেক কথা বা বাক্য। যা আজ আর দেখা যায় না। যেমন-শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।কিন্তু তা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।এটা সত্যিই যথাযথ উপযুক্ত বাক্য।আমরা আরো পড়েছি, মেশিনে ছাটা চাল থেকে ঢেঁকি ছাটা চাল অধিক উত্তম ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ।কারন চালের উপরি ভাগের অংশেই থাকে পুষ্টিমান।মাটির কলসির পানি পিতলের কলসির পানি থেকে ঠান্ডা।কেঁচোকে প্রকৃতির লাঙ্গল বলা হত।পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সব কিছুতেই লেগেছে পরিবর্তনের আবহাওয়া।আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আধুনিক থেকে অত্যাধুনিকের দিকে, যান্ত্রিক যুগের দিকে।পরিবর্তনশীল পৃথিবীর নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন কাযর্ক্রমের আওতাধীন।কোনটি অধিক সুবিধাজনক, আবার কোনটি ক্ষতিকারকও বটে।যেমন বর্তমানে অধিক মুনাফার আশায় বড় চাল-কে মেশিনে কেটে ছোট আকৃতির চাল করে বিক্রি হয়, হচ্ছে অধিক পরিমাণে।আমরা তা ভক্ষণ করছি অধিক আগ্রহ সহকারে।পূর্বের কথা সত্যি হলে ছোট চালে পুষ্টিমানের বিন্দু বিসর্গ কি থাকছে বহমান?আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি তাতে ফ্যাশন বা আভিজাত্যের অংশ হিসাবে।সত্তর/আশির দশক থেকে বর্তমান সময়ে বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়।কেঁচোকে প্রকৃতির লাঙ্গল বলা হত, কেঁচো ফসল উৎপাদন উপযোগি মাটির নীচের অংশ তুলে আনত বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপরে।তাছাড়া কেঁচোর উদগীরণ কৃত মাটি জৈব সারের একটি অংশ, তা পরিক্ষিত সত্য।আর আজ বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ধ্বংশ করছ, বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।সম্মানিত পাঠক মহল সে বিষয়ে অধিক জ্ঞাত বলে আমি আর সে দিকে অগ্রসর হচ্ছি এখানে কথাগুলি বলার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে স্মৃতির পাতায় জমে থাকা সচিত্র রীলের পুনরাবৃত্তি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে বেরিয়ে পড়লাম কবর জেয়ারতের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।ভোরে দিনের আলো মেঘ-বৃষ্টিহীন হওয়াতে ভালই লাগছিল।দাড়িয়ে আছি একটু প্রকৃতির বাতাসের স্পর্শ পাবার ইচ্ছায়। তখনই দেখতে পেলাম অবিশ্বাস্য রকম দৃশ্যপট।যা এখন কল্পনাকেও হার মানায়।অভাবনীয় দৃশ্য।এ কারনে এতো ভনিতা করছি।কারন ১৯৬০-৭০ দশক অবদি এ জাতীয় সচিত্রতা অহরহ প্রত্যক্ষ করেছি, দেখে অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে উপরের ছবির সহিত দেশে তথা আমাদের এলাকা থেকে এ জাতীয় ছবি হয়েছে নিরুদ্দেশের যাত্রী।ধীরে ধীরে চলে গেছে বনবাসে।তখনকার সময় প্রত্যেক কৃষক পরিবারে ছিল গরু।ছিল কৃষি কাজের সহিত জড়িত সকল প্রকার হাতিয়ার।প্রতিদিন ভোরে দেখা হত এভাবে মাঠে যাবার দৃশ্য।একজন কৃষক গরু, লাঙ্গল, জোয়াল, মই, হাতে থাকা হুক্কা সমেত মাথায় ছাতা দিয়ে মাঠে যাবার দৃশ্য। কতই না কষ্ট, পরিশ্রম করতে হত। তারপরও নেই কৃষকের ক্লান্তি।সকাল দশ এগারোটায় আবার হাল চাষ সমাপনান্তে ফিরে আসার সচিত্রতা।গ্রামের অনেক প্রকার কর্মের সহিত এ জাতীয় দৃশ্য চলে গেছে বনবাসে।এ জাতীয় চিত্রকে এখন বলা হয়ে থাকে পুরনো দিনের হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতি ও চাষবাস।আমরা যাচ্ছি এগিয়ে নিত্য নুতন আবিষ্কৃত যন্ত্রাদির উৎকর্ষ ও অগ্রগতির পথে।ভবিষ্যতে আর কি আসবে তা শুধু ভাবনার বেড়াজালে আবদ্ধ।(চলবে)
লেখক-মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সভাপতি- বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ,সিলেট।