এইচ এম বাবুল, জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম: পাঁচ কন্যা সন্তান থাকার পর আবারও একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে দু:শ্চিন্তায় পড়েছে এক দরিদ্র দম্পত্তি।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যাকে দত্তক দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে দম্পাত্তির এক স্বজন।
সদ্যজাত তিন সন্তানের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ভালো নেই জন্ম দেয়া মাতার। দরিদ্র মায়ের বাড়ির মেঝেঁতে দিনরাত পার করছে তারা। মিলছে না সু চিকিৎসা। জন্মের ছয় দিনেও নাম রাখা হয়নি তিন সদ্যজাত সন্তানের ।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিন নওদাপাড়া গ্রামের মৃত্যু আইয়ুব আলীর বড় মেয়ে ফাতেমার ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামের দিনমুজুর সাইফুর রহমানের সাথে বিশ বছর আগে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তাদের সংসারে এক এক করে ৫টি কন্যার জন্ম হয়।
বড় কন্যাকে এক বছর আগে বিয়ে দেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন নবম শ্রেণী, একজন সপ্তম শ্রেণী এবং দুইজন শিশু শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। দরিদ্য পরিবারে এতগুলো সন্তান নিয়ে টানপড়েনের মধ্যে দিন কাটে ফাতেমা-সাইফুরের দম্পত্তির।
এর মাঝে পুত্র সন্তানের প্রত্যাশায় আবার গর্ভধারণ করে ফাতেমা। সন্তান প্রসবের জন্য মায়ের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদের নওদাপাড়ায় যান ফাতেমা। ফাতেমার মা রহিমা বেগম নিজেও একজন দরিদ্র মানুষ। বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকালে সেখানেই একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ফাতেমা।
এক সাথে তিন কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসার খবরে খুশি হতে পারেনি ফাতেমার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজন। ফাতেমার মামা প্রভাষক মেহের আলী জানান, জন্মের পর তিন শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও মাতা ফাতেমার শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। ৬দিনেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে নাই সে। তিনি আরো জানান, ফাতেমা এখনো অজ্ঞানের মতো অবস্থায় আছে।
কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে চিকিৎসা চলছে। ফাতেমার স্বামী সাইফুর রহমান এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। কারো সাথে ভালো করে কথ বলছেন না। মেহের আলী আরো জানান, তাদের দরিদ্র সংসার এবং আগের ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে তাই সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যা সন্তানদেরকে দত্তক দেয়ার চিন্তা করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিলো। তবে এখন সীদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে।
সন্তানদের মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দত্তক দেয়া হবে না। কন্যাদের পিতা সাইফুর রহমান জানান, আল্লাহ যা করেছে তা ভালো হয়েছে। কষ্টের সংসার হলেও তাদের মানুষ করতে হবে। সাইফুরের প্রতিবেশি বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সাইফুরের বাড়ির ভিটে ছাড়া চাষের তেমন জমিজমা নেই। সে কখনো সবজি বিক্রি করে আবার কখনো দিনমুজরি করে সংসার চালায়। এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার যোগাতে হিমসিম খেতে হয় তাকে।
তার শাশুড়ীও দিন আনে দিন খায়। দুই পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এরপর আরো তিন সন্তানের জন্ম তার (সাইফুরের) মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তার মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, এ বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তারপরেও খোজ খবর নিয়ে ওই তিন সন্তানকে মানুষ করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারি সুযোগ -সুবিধা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।