এইচ এম বাবুল জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রামঃ-
টানা ১৫ বছর ধরে বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছু ও কাচা গরুর মাংস খেয়ে বেঁচে আছেন মোজাহার মিয়া (৪৮)। যদিও তিনি কোনো সাপুড়ে নন। সাপ খেলাও তার পেশা নয়। অভাবের তাড়নায় দিনমজুর মোজাহার মিয়া সাপ খাওয়া শুরু করেন। এরপর সেটা তার নেশা হয়ে গেছে।
যদিও সাপে কাটা রোগীর সন্ধান পেলে বা কেউ ডাকলে ক্ষত থেকে চুষে বিষ তুলে নেন এই ব্যাক্তি। কেউ সাপের উপদ্রবে ভুগলে তিনি সাপ ধরতে চলে যান। এ জন্য কোনো ডিমান্ড নেই যে যা দেয় তাই তিনি গ্রহণ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোজাহার মিয়া।
বাবা মৃত রইচ উদ্দিন ব্যাপারী। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বিচ্ছু, কাঁচা গরুর মাংস ও ভুরি খেয়ে জীবন যাপন করে আসছেন। মানুষ খাদ্য হিসাবে ভাত মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করলেও মোজার মিয়া অখাদ্য প্রাণী সাপ, ইঁদুর, ব্যাঙ খেয়ে সমাজের কাছে তিনি সমালোচনার পাত্র হয়ে উঠেছেন।
তার এই অভ্যাস ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের জন্য অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাপ ভক্ষণের কারণে দাম্পত্য জীবনে তিনি পরেছেন নানান বিড়ম্বনায়। একাধিক বিয়ে করে ধরে রাখতে পারে নি কোন বউ। ফলে ঘর সংসারে একাকীত্বে দিন কাটছে সাপ খেকো এই মানুষটির।
অবিশ্বাস্য ঘটনাটি বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি। নেশা তার সাপ ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, বিচ্ছুসহ কাঁচা মাংস ও ভুরি। শুধু তাই নয় মাঝে ক্ষেতে ছিটানো ডায়মোক্রম বিষাক্ত বিষ খেয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন তিনি। বর্তমানে তার দুই স্ত্রী ও দত্তক নেয়া এক ছেলে সন্তান রয়েছে। সেই ছেলের ঘরে দুই নাতিও আছে।
সাপ খেকো মোজারের প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম বলেন, মোজো ভাই আমার প্রতিবেশী। বিভিন্ন সময় তিনি সাপ খেয়ে থাকেন। তার এ রকম অদ্ভুত খাদ্যাভ্যাস দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসে।
মোজাহার মিয়া বলেছেন, আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি তখন থেকে আমি সাপ বিচ্ছু খাই। সাপের ক্ষেত্রে বিষাক্ত সাপ আমার খুবই পছন্দ। বিষাক্ত সাপ ও বড় সাইজের যে কোনো সাপের স্বাদ ছোট সাইজের সাপের তুলনায় অনেক সুস্বাদু। এই সাপ খেতে গিয়ে লোকজনের দ্বারা হাজারে বিড়ম্বনায় পড়েছি। তবুও মন মানে না। এটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। এতে আমার শারীরিক কোনো সমস্যাও হয় না।
তিনি আরও বলেন, অভাবের সংসারে ছোট বেলায় খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পারায় এসব খাওয়া শুরু। খিদে মিটে যায় এটাই অনেক বড় ব্যাপার। সাপের বিষ আমাকে কাবু করতে পারে না। তাই অনেক সাপে কাটা রোগীর বিষ আমি খেয়ে তাদের বাঁচিয়েছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং জেলার বাইরেও আমার ডাক পড়ে। কিছুদিন আগে ফরিদপুর গেছিলাম এক বাড়িতে সাপ ধরতে। ঐ বাড়িতে সাপের উৎপাতে সবাই অতিষ্ঠ ছিল। আমি সাপ ধরে খেয়ে ফেললাম অনায়াসে। বিনিময়ে টাকাও পেলাম।
মোজাহার মিয়া জানান, বিষধর সাপের পেটে কৃমি থাকে না। ফলে এ কারণে বিষধর সাপের স্বাদ তুলনামূলক ভাবে বেশি। সাপ না খেলে শরীরে এনার্জি আসে না। যখন তখন সাপ পাওয়া যায় না ফলে সাপের অপ্রতুলতার কারণে গরুর কাঁচা রক্ত ও কাঁচা ভুরি খেয়ে জীবন যাপন করে থাকেন বলে জানান মোজাহার মিয়া। যদিও এখন তিনি মানুষের স্বাভাবিক খাবার গ্রহণের চেষ্টা করছেন। কারণ সাপের জোগান কমে গেছে। মানুষও ভালোভাবে নেয় না, ঘৃণা করে। এছাড়া অনেকে প্রশাসনের ভয় দেখায়। তাই চেষ্টা করছি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। কিন্তু সমস্যা একটাই রোজগার নেই খাবার জুটবে কেমনে?
পার্শ্ববর্তী সোনাহাট ইউপির চেয়ারম্যান মো. মায়নুল ইসলাম বলেন, মোজাহার সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী খাওয়ার কথা জেনেছি। একজন সুস্থ ব্যক্তি কখনো এ কাজটি করতে পারেন না। আমার মতে মোজাহার মিয়াকে চিকিৎসার মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন (প্রাণী ও উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ) জানান, সাপ বিচ্ছু খেয়ে জীবন যাপন করা একটি বিরল ঘটনা। পাশাপাশি বিষের কবলে পড়ে যে কোনো মুহূর্তে তিনি মারা যেতে পারেন। যদিও তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত কি-না তা যাচাই করে দেখা দরকার। তার চিকিৎসা প্রয়োজন।,