এইচ এম বাবুল,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ–
করোনার দুর্যোগ কালে জেলা শহরের বিনোদন কেন্দ্র গুলো বন্ধ থাকায় মানুষজন বিনোদনহীন হয়ে পড়েছে। এই মুহুতেই নদ-নদী ও চরাঞ্চলে বির্স্তীণ কাশবন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি প্রেমীদের বিনোদন স্থল।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর র্তীরবর্তী মাঠ জুড়ে সাদা কাশফুলের সমাহার।
নয়ণ জুড়ানো ধরলার তীরে কাশফুলের শুভ্রকায় বিমোহিত প্রকৃতি প্রেমী তরুণ-তরুণীরা মনের আনন্দ উচ্ছ¡াস নিয়ে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সোমবার বিকালে ফুলবাড়ী সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে শিমুলবাড়ী এলাকায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর উত্তর পার্শ্বে গিয়ে দেখা গেছে, ধরলার তীরে কাশফুলের বাগানে চারিদিকে শুধু থৈ-থৈ পানি আর পানি।
ধরলা ভর্তি পানি থাকা সত্তে¡ও দুর-দুরান্তের প্রকৃতি প্রেমী তরুণ-তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষজন নৌকা ভাড়া করে কাশবনের সুভাস পেতে আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং পছন্দের সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছেন।
এ যেন বাঙালীদের মনে দোলা দিতে বর্ষাকালকে বিদায় জানিয়ে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে প্রতিবছর ফিরে আসে শরৎকাল। ধরলার চরে জেগে উঠা র্তীরবর্তী এক বৈচিত্রময় মাঠ জুড়ে ফোঁটে সাদা সাদা কাশফুল।
তাই তো বাঙালীর হৃদয়ে আনন্দের আশা জাগায় শরতের এই কাশফুল। এ কাশফুল শিশিরভেজা মাঠ জুড়ে সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল মনের হৃদয়ে শিহরণ জাগে প্রকৃতি প্রেমীদের।
উপজেলার নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী ,ফুলবাড়ী ও বড়ভিটা ইউনিয়নে ধরলা নদীর তীরে ধু-ধু বালুচরের মধ্যে বিভিন্ন বির্স্তীণ উচু জায়গা জুড়ে আপন মনে ফুটেছে শরতের দাদা কাশফুল। কাশফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত পুড়ো মাঠ জুড়ে।
প্রতিদিন বিকাল হলেই শতশত দর্শনার্থী শেখ হাসিনা ধরলা সেতু দেখতে এসে সেতুর উত্তর পাশে স্বপ্নের কাশফুলের বাগানে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করে এবং সাদা কাশফুলে সুগন্ধ পাওয়ার আশায় অনেক স্কুল,কলেজ গামী তরুন-তরুনীরাসহ অনেকেই দুর দুরান্ত থেকে মনের একটু প্রশান্তির জন্য ছুঁটে আসে স্বপ্নের কাশফুলের বাগানে। অনেকেই আবার কাশবনে মজা করতে করতে সময় পাড় করেন ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলের মধ্যে কাশফুল অন্যতম। কাশফুল আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে কোমলতা ও সরলতা। র্তীরবর্তি নদীগুলোর ধু-ধু বালুচরের কাশফুল বাগানে নির্মল প্রকুতিতে মানুষজন বার বার ফিরে যায়।
তবে পুথিবীর কোন দেশে ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের ফুলের মত কাশফুলে কদর আছে কিনা জানা নেই। তবে বাংলাদেশের মানুষের মনে জয় করে নিয়েছে ঘাসজাতীয় কাশফুল।
প্রকৃতির শত শত প্রেমীদের কাছে শরতের কাশফুল ব্যাপক জনপ্রিয়তা হয়ে উঠেছে। তাই তারা কাশবনে মনের শুভ্রতার খোঁজে বার বার ফিরে আসে। সাদা কাশফুল আর নীল সবুজ আকাশ দেখে মুগ্ধ বিহলতায়।
আগে ১৫ থেকে ২০ বছর আগে চরা লের চাষিরা বানিজ্যিক ভাবে কাশফুল চাষ করতো। এখন কাশফুল বিলীনের পথে। শুধুমাত্র নদ-নদীর তীরে কাশফুল দেখা যায়। আমাদের এই বাংলাদেশে সাধারণত তিন প্রজাতির কাশফুল আছে।
সমতলে এক প্রজাতি কাশফুল এবং পাহাড়ে দুই প্রজাতির কাশফুল। তবে সবার কাছে সমতলের প্রজাতির কাশফুল বেশি জনপ্রিয় এবং খুব সহজেই কাছাকাছি দর্শনযোগ্য বলে অনেকে জানান।
বাংলাদেশের সব নদীর র্তীরে প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধারে বেশি কাশফুল জন্মে। আশ্বিনের এই দিনে প্রকৃতিতে শরৎকালে নীল আকাশজুড়ে এক নরম সাদা মেঘের ভেলা হয়ে আপন মনে ঘুরে বেড়ায় জেলেদের পালতোলা নৌকায় চড়ে।
পাশ্ববতী লালনিরহাট সদর উপজেলার থানা পাড়া থেকে আসা প্রীতিলতা ও মৌমিতা মোহনি জানান, শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাশে ধরলার তীরে সুন্দর একটি কাশফুলের বাগান দেখার খুব ইচ্ছা, তাই আজ দেখতে এসেছি।
আমরা ভাবতেই পারিনি এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করবো। কল্পনার বাহিরে যে এতো ভাল লাগলো। এতো সুন্দর পরিবেশে সাদা কাশফুল আর নীল সবুজ আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। দৃশ্য গুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে।
লালমনিরহাট থেকে আসা এস দীলিপ রায় জানান,এতো সুন্দর একটি কাশবন চরা লে পেয়েছি। সত্যিই একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এই মুহুতে ভাল লাগার জায়গা হলো ধরলা নদীর চরে কাশবনে ঘুরতে আসা। আমি আসলাম দেখে গেলাম। সম্ভব হলে আমার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ঘুরতে আসবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ জানান,বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলের মধ্যে কাশফুল অন্যতম। বাংলাদেশের সব নদ-নদীর র্তীরে প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধারে বেশি কাশফুল জন্মে। কাশবন শুধু প্রকৃতি প্রেমীদের মনে তৃপ্তি মিঠাই না।
এ কাশবন (কাশিয়া) দিয়ে নদী ভাঙন রক্ষা পায়। সেই সাথে কাশবন (কাশিয়া) আগের মানুষ ঘর-তৈরী করতো এবং এখন পানের বরে ছাউনি ,সেই সাথে রান্নার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।