রাকিব হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ“মরনের পরেও যদি মানুষের উপকার করা যায় করব, কবর না দিয়ে মোরে পাঠিয়ে দিও চিকিৎসা মহা বিদ্যালয়ে ” সাঈদ ইসলাম”
‘মনের ভয় দূর করুন, স্বেচ্ছায় রক্তদান করুন’ স্লোগানকে সামনে রেখে’রক্তদানে উৎসাহ প্রদান ও রক্ত সংগ্রহ কাজে সেচ্ছায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক মহানুভবতার নজির স্থাপন করেছেন দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা বন্ধু কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সাঈদ ইসলাম । রক্ত দিন জীবন বাঁচান এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে তিনি এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
লালমনিরহাট জেলায়,পাটগ্রাম উপজেলাধীন দহগ্রাম ইউনিয়নের আঙ্গোরপোতায় তার জন্ম । বাবা নিত্যান্ত একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মা গৃহিনী,দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সাঈদ ইসলাম পরিবারের বড় ছেলে।
আমি বলছি এক রক্ত যোদ্ধার কথা। নিয়মিত রক্তদাতা।
রক্ত প্রয়োজন, এমন কথা শুনলে সে অস্থির হয়ে যায় রক্ত যোগাড় করে দিতেন। তিনি ছোট থেকে স্বেচ্ছাসেবী দের ভালোবাসতেন ,এবং নিজে ও বড় হয়ে বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন। মিষ্টভাষী ও ভদ্র । নিজ এলাকায়(দহগ্রাম) তাকে সবাই খুব পছন্দ করে। অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না।
কালের পরিবর্তে আজ রক্তের ফেরিওয়ালা সাঈদ ইসলাম ‘রক্ত ভান্ডার’ হয়েছে অনেক সমৃদ্ধ,যাতে উপকৃত হয়েছেন অনেক চেনা-জানার পাশাপাশি শত শত অজানা ব্যক্তিও। তার প্রচেষ্টার ফসল আঙ্গোরপোতা বন্ধু কল্যাণ পরিষদের মাধ্যমে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতায় প্রায় বিনামূল্যে তিন হাজার মানুষের (রক্ত গ্রুপ) সনাক্ত করা হয়েছে, বিনা মূল্যে ১০০ ব্যাগ রক্ত মুমূর্ষু রোগীদের দেওয়া হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার করুণায় নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন কত-শত রোগী। যার পেছনে রয়েছে রক্তের ফেরিওয়ালা সাঈদ এর অপরিসীম অবদান। কি রাত, কি দিন, কারোও রক্তের প্রয়োজনে কেউ কোন সমস্যায় থাকলে এর সমাধান মানে সাঈদ ইসলাম। আর সাঈদ ইসলাম কাউকে নিরাশ করতেন না, যে কোন ভাবেই সাঈদ তার কাছে সাহায্য চাওয়া সেই ব্যক্তিটিকে রোগীর প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত মিলিয়ে দিবেই দিবে।
নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল হতে সাঈদ সব সময় রক্তের খোঁজে ও রক্ত দানে উৎসাহিত করতে একজন সচেতন নাগরিক। মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা, বিপদে থাকা মানুষকে সাহায্য করতে রক্ত দানে উৎসাহিত করে (সাঈদ ) দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যায়। সাঈদ এখন কোন রোগীকে নিজে বা সংগ্রহ করে রক্ত দিলে, সেই এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে সেই রোগী কিংবা রোগীর কোন আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয় যে পরবর্তিতে অন্য কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তারাও এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে অন্য কোন রোগীকেও সাহায্য করবেন।
ওই প্রতিশ্রুতি আদায়ের কারণ হিসেবে রক্তের ফেরিওয়ালী সাঈদ ইসলাম জানায়, বেশ কয়েকবছর এই কাজে জরিত আছি ইনশাআল্লাহ থাকবো।
নিজে ৭ম বার রক্ত দান করেছি , ইনশাআল্লাহ যতদিন বাঁচবো ,রক্ত দান করে যাবো, কোনো রোগীর রক্ত প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছায় রক্তের ব্যবস্থা করে থাকি। কেউ রক্ত দান করতে চাইলে অথবা কারো ডোনার প্রয়োজন হলে দুজনেরই রক্তের গ্রুপ, নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর নোটবুকে লিখে রাখি। পরে কারো রক্তের প্রয়োজন হলে ওই লিস্ট অনুযায়ী আগ্রহী রক্তদাতাদের সহযোগীতায় স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ দেই। এতে করে ওই রোগীদের জীবন বাঁচে।আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মানুষই রক্ত দিয়ে ভয় পায়। এই ভয় থেকেই নিজের আত্মীয়- স্বজন কেও রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। আর আমি (সাঈদ ) মানুষের এই ভয়কে দূর করার জন্যই বিপদের সময় রক্ত দেই তবে কৌশলে তার/তাদের (অন্য রোগী) কাছ থেকে পরবর্তি সময়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দানের প্রতিশ্রুতি আদায় করি, যাতে করে সমাজে স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আমাদের সমাজে স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কেউ আর রক্তের অভাবে অকালে মারা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, রক্তদান ও সংগ্রহ করে মানুষের জীবন বাঁচানোতেই আমার তৃপ্তি। যতোদিন বাঁচবো ততোদিন রক্তদান করে মানুষের উপকার করে যাবো। বার বার পাগল উপাধি পেয়েছি, মানুষের কাছে, তবুও পাগলামী ছাড়তে পারিনি!আমি হিরো হতে চাই, কিন্ত সেটা সিনেমা বা নাটকের নয়, অসাহয় মানুষের হিরো, রক্তদানের হিরো!রক্তদানের কাজের জন্য পেয়েছি, মানুষের ভালবাসা, , স্নেহ, এখন তাকে সবাই রক্তের ফেরিওয়ালা বলেই চিনে।