লিখেছেন সাংবাদিক সমুজ আহমদ সায়মনঃ
শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ বা জাতি উন্নতির শিখরে আরোহন করতে পারেনা।জাতির উন্নতি ও সফলতা নির্ভর করে শিক্ষার উপর।শিক্ষা এমনই এক শক্তি যা মানুষের অন্তরকে করে আলোকিত, বিবেককে করে জাগ্রত। আর উন্নত শিক্ষার জন্য দরকার ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাতির মানস-গঠনে ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম। উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই,তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক ও সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় সদা মত্ত থাকে।আর সে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই উন্নয়ন,অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামেয়া ইসলামিয়া এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসা।
প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্টাতাঃ ছায়া সুনিবিড় পাখ-পাখালির কলকাকলী মূখরিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেলিকোনায় ১৯৭০ সালে বর্তমান জামেয়া ইসলামিয়া এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসাটি তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। মাদ্রাসাটি হিফজ ও এবতেদায়ী বিভাগ দিয়ে তার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু কালীন সময়ে প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন পশ্চিম সিলেটের সুনাম ধন্য আলেমেদ্বীন হাজার আলেমের ওস্তাদ,পরোপকারী,সমাজ সেবক হযরত মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান। তৎকালীন সময়ে মাদ্রাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমানের চাচা তমিজ উল্লাহ ৬২ শতক জমি দান করলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সপ্ন বাস্তবায়নের পথ সহজ হয়।
নাম করণের ইতিহাসঃ ১৯৭০ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নামকরণ করা হয় তেলিকোনা ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে মাদ্রাসাটিকে দাখিলে বর্ধিত করে আরেক দফা এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জামেয়া -ই -ইসলামিয়া তেলিকোনা দাখিল মাদ্রাসা। ১৯৮৪ সালে মাদ্রাসাটি দাখিল পর্যন্ত এমপিও ভূক্ত করা হয়।সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসাটিকে আলীম পর্যন্ত বর্ধিত করে নতুন নামকরণ করা হয় জামেয়া ইসলামিয়া এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসা।২০০৪ সালে মাদ্রাসাটি আলিম পর্যন্ত এমপিও ভূক্ত করা হয়। যা আজ অবধি দৃশ্যমান আাছে।
নতুন ভবনের ভিত্তি স্থাপনঃ
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিভৃত পল্লীর ছায়া ঘেরা স্থানে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর উপজেলার তেলিকোনায় এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসার সরকারি অর্থায়নে সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে চার তলা ভবন নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমান নগর) আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্প্রর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোকাব্বির খান। উক্ত ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা শফিকুর রহমান, খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পীর মোহাম্মদ লিয়াকত হোসাইন, বর্তমান চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, প্রভাষক এটিএম নুর উদ্দিন, আরবী প্রভাষক মাওলানা হরমুজ আলী,শিক্ষক ইশাদ উল্লাহ,গ্রামের মুরব্বী শাহ তোফাজ্জুল হোসেন ভান্ডারী প্রমুখ। ঐতিহ্যবাহী এ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া ইসলামিয়া এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসার সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে চার তলা ভবন নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করা হয়ে গেলো গত ৫ এপ্রিল ২০২১, সোমবার।সম্প্রসারিত নতুন ক্যাম্পাসে চার তলা ভবন নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবীন মুরব্বী আলহাজ্ব বাদশা মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, পশ্চিম সিলেটের গৌরব, সৎপুর দারুল হাদীস কামিল (এম এ) মাদ্রাসার সাবেক সুনামধন্য অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা আলহাজ্ব শফিকুর রহমান। আরো যারা উপস্থিত ছিলেন চরা জামেয়া দাখিল মাদারাসার সুপার মাও: ছালেহ আহমদ, জামেয়া ইসলামিয়া এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ মুখলিছুর রহমান, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা নিজামুল ইসলাম নওশা মিয়া, অত্র মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক আলতাফুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক নুর উদ্দিন, আরবী প্রভাষক মাওলানা ফারুক আহমেদ, কারী মাও ওলিউর রহমান, সৎপুর কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ সদস্য হাজী আবুল লেইছ, দেওকলস হাফিজিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ মুহিবুর রহমান, পীর শাহ তোফাজ্জুল হোসেন ভান্ডারী, মোহাম্মদ জবেদ আলী, চান মিয়া, আছকির আলী, মোহাম্মদ জমির উদ্দিন, সাংবাদিক নুর উদ্দিন, মোঃ আপ্তাব আলী, সমুজ আলী, শরিফ আহমেদ রাজু, ইসলাম উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, মোহাম্মদ মখন মিয়া হাজী আকলিছ হোসেন ,আব্দুল মালিক, হাজী ময়না মিয়া, পীর আমিনুর রহমান, হাজী মনির মিয়া, দলিল লেখক নুর উদ্দিন, হাজী জামাল উদ্দিন, বশির উদ্দিন, মইন উদ্দিন, ওলিউর রহমান, শামসুল ইসলাম, সালেহ আহমদ, ফারুক আহমদ, মোহাম্মদ ফিরোজ আহমদ, কয়েছ আহমদ, এহসান মিয়া, মাহফুজুর রহমান, মতিউর রহমান, লাল মিয়াসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
ভূমির পরিমাণঃ ১৯৭০ সালে যখন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ভূমির পরিমাণ ছিল ৬২ শতক। ২০১৪ সালে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান মারা যাওয়ায় সভাপতির পদ শুন্য হয়ে যায়। পরে তিনির যোগ্য সহধর্মিণী মাদ্রাসার আজীবন দাতা সদস্য শিক্ষাবিদ রাবেয়া আক্তার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের মাধ্যমে এই মাদ্রাসার সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠাতা পরিবার আরো ৩৪ শতাংশ ভূমি মাদ্রাসায় দান করলে দানকৃত ভুমি ও পূর্বের ভূমি মিলে মাদ্রাসার ভূমির পরিমাণ দাড়ায় ৯৬ শতক।এই ৯৬ শতক ভূমির মধ্যে সরকার কতৃক ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হয় এবং বর্তমানে নির্মাণ কাজ চলমান।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়নে ধনী গরীব সবার অর্থনৈতিক সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে মাদ্রাসার দ্বিতল ভবন প্রতিষ্ঠা করা,বিশেষ করে প্রবাসী আলহাজ্ব আব্দুর নুর,সাজিদুর রহমান, আলহাজ্ব আবুল হোসেন, মকদ্দুছ আলী,ছেরার আলী,জমসিদ আলীসহ এলাকার অনেক গুণী শিক্ষা দরদী ব্যক্তিবর্গের এ মহৎ কাজে অংশিদারিত্ব করায় এবং তৎকালীন সময়ে কাজী মাওলানা শহীদ আলী একাডেমিক ভবন নির্মাণে হাল ধরায়, মাদ্রাসার দ্বিতল ভবন প্রতিষ্ঠা করতে সহজ হয়। অবশেষে১৯৯৩ সালে সরকার কতৃক একাডেমিক ভবন প্রতিষ্ঠা হয়।মাদ্রাসার কাজ ত্বরান্বিত করতে বা মাদ্রাসাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে যাদের মেধা,পরিশ্রম, সাহায্য সহযোগিতা প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে তাদের তথা গোটা এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারনদেরকে এবং মাদ্রাসার সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মাণেও যাদের সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে এবং আগামীতেও মাদ্রাসার উন্নয়ন অগ্রগতিতে থাকবে সহযোগিতা এলাকাবাসী সহ সবাইকে প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়। পাশাপাশি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ঐতিহ্য ও গৌরবের সাথে শিক্ষার মান সম্প্রসারনের জন্যে উপজেলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে এ পর্যন্ত সব সরকারের সহযোগিতায়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়,বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড,এবং জেলা মহকুমা শিক্ষা বিভাগের প্রতিটি স্তর থানা পর্যায় থেকে শুরু করে সকল স্তরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি আশির দশকে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে তিলে তিলে গড়ে ওঠে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যাদের পরিশ্রম ও সহযোগিতায় আজ দাড়িয়েছে এলাহাবাদ আলীম মাদ্রাসাটি তাদের সকলের প্রতি প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়।
পরিশেষে এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসী তথা বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন প্রতিষ্ঠাতা পরিবার।