আল্লাহর নৈকট্যলাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। ইতিকাফের শাব্দিককাফ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো অবস্থান করা, আবদ্ধ করা বা আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায়: ইতিকাফ হলো ইবাদতের নিয়তে জুমা মসজিদে অবস্থান করা।ইতিকাফের প্রকার: ইতিকাফ তিনপ্রকার। ওয়াজিব, সুন্নত আর মুস্তাবাহ এতিকাফ। ওয়াজিব এতেকাফ হলো মান্নতের ইতিকাফ। সুন্নত এতিকাফ হলো রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ ।আর মুস্তাহাব বা নফল এতিকাফ হলো ওপরে উল্লেখিত (ওয়াজিব ও সুন্নত ) দুই প্রকার ছাড়া বাকি এতেকাফ।
যে কতক্ষণ সময় মসজিদে অবস্থান করবে এতিকাফের নিয়ত করতে পারে।
ইতিকাফের গুরুত্ব:
এতিকাফের গুরুত্বের ব্যাপারে ইমাম যুহরি বলেন, ‘عَجَبًا لِلنَّاسِ تَرَكُوا الِاعْتِكَافَ وَقَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَفْعَلُ الشَّيْءَ وَيَتْرُكُهُ وَلَمْ يَتْرُكْ الِاعْتِكَافَ مُنْذُ دَخَلَ الْمَدِينَةَ إلَى أَنْ مَاتَ.’
ঐ সব লোকদের জন্য আমার আশ্চর্য লাগে যারা ইতিকাফ করে না, অথচ আল্লাহর রাসূল সা. মাঝেমধ্যে অন্যান্য (সুন্নত) আমল বাদ দিলেও, মদিনা শরিফ হিজরতের পর আজীবন মসজিদে নববিতে ইতিকাফ করতেন।
’ (শামেলা)এমনকি এক বছর তিনি ইতিকাফ করতে না পারাই পরবর্তী বছর ২০দিন ইতিকাফ করেন। আর যেই বছর নবি সা. দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন সেই বছর ২০দিন ইতিকাফ করেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন
,كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.
জিবরীল আ. প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনান। নবীজী প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯৯৮, ২০৪৪
ইতিকাফে জাহান্নাম দূরে সরতে থাকে: মুসলিমসমাজ যদি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চায় তাহলে রমজানের শেষদশকে ইতিকাফের বিকল্প নেই। কারণ প্রত্যেক ইতিকাফে দোজখ আপনার থেকে দূরে সরছে আর জান্নাত আপনার কাছে আসছে এবং ইতিকাফরত ব্যক্তির ব্যাপারে স্বয়ং নবি করিম সা. ইবনে আব্বাস রা.-কে বলেছিলেন
,‘مَنْ مَشَى فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ خَيْرًا لَهُ مِنَ اعْتِكَافِ عَشْرِ سِنِينَ، وَمَنِ اعْتَكَفَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ ثَلَاثَ خَنَادِقَ، كُلُّ خَنْدَقٍ أَبَعْدُ مِمَّا بَيْنَ الْخافِقَيْن’
‘যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের সহযোগিতায় হেটে হেটে আসে, তার এই সহযোগিতার ধরুন (তার জন্য) দশবৎসর ইতিকাফ অপেক্ষা উত্তম । আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতিকাফও করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক আড়াল সৃষ্টি করে দেন, এক একটি খন্দক আসমান- জমিনের চেয়ে বেশী দূরত্বসমান।’ (তাবরানি, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ,৮/৩৫১)শেষদশকে ইবাদত বাড়িয়ে দিতেন: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. নবীজীর শেষ দশকের আমলের বিবরণ দিয়ে বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، مَا لَا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দিনগুলোর তুলনায় রমযানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১তিনি আরো বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ، أَحْيَا اللّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَجَدّ وَشَدّ الْمِئْزَرَ,
রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজী পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪; সহীহ বুখারী, হাদীস তিনি আরো বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ، أَحْيَا اللّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَجَدّ وَشَدّ الْمِئْزَرَ,
রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজী পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪নবীজী প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬
সুন্নত ইতিকা সম্ভব না হলে দু-এক সুন্না দিনের জন্য তো ইতিকাফ করা যায়। পূর্ণ দশ দিন সুন্নত ইতিকাফ করতে না পারলে নফল হিসাবে যে যতটুকু পারি ততটুকুই আল্লাহর ঘরে অবস্থান করি। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন। তাতেও অনেক ফায়দা। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে কমপক্ষে বেজোড় রাতগুলোতে নফল ইতিকাফের নিয়তে যদি মসজিদে অবস্থান করা হয় তবুও তো কদরের রহমত-বরকত লাভ করার আশা করা যায়।
লেখকঃ হাফেজ মাওলানা মুফতি আশরাফুল ইসলাম খুলনা