লেখকঃ সমুজ আহমদ সায়মন
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুক একটি ভয়াবহ চর্চিত প্রথা।যৌতুক প্রথার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক নারীকে নিপীড়ন ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়।নারীদের জয়গান গাইতে গিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আজকের এ উত্থানের পেছনে নারীর যে অবদান রয়েছে তা বর্তমান যৌতুক নামের কালপ্রথায় অবমূল্যায়িত হচ্ছে।
বর্তমানে যৌতুক ভয়াবহ ব্যাধির মতো বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে যৌতুকের শিকার হচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।কোনো পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়া মানেযেন সেই পরিবারে অভিশাপ নেমে আসা।কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া অর্থ হলো, সারাজীবন তার ভরণপোষণ বহনের পরও বিয়ে দেওয়ার সময় যৌতুকের করালগ্রাসে পিতামাতার সঞ্চিত ধনের সবটুকু বিসর্জন।
নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সৌন্দর্য ও গুণাবলী যতই থাকুক না কেন,যৌতুক দিতে না পারলে স্বামীর পরিবারে তার কোনো মূল্যই থাকেনা।কারণ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অর্ধেক মূল্যে বিচার করা হয়।ধনী পরিবারগুলি এ অভিশপ্ত প্রথাটিকে বাংলাদেশের মর্মমূলে গেঁথে দিচ্ছে।তারা তাদের কন্যাদের বিয়ে দেওশার সময় পাত্রপক্ষ না চাইলেও অনেক সময় কন্যার সঙ্গে নানারকম উপটৌকন দিচ্ছে।যার ফলে সমাজের সর্বস্তরে এ প্রথাটিকে সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে এবং দরিদ্রদেরও যৌতুক দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এখনো পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়,প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী যৌতুকের বলি হচ্ছে।পাষন্ড স্বামী অথবা তার পরিবার হয়তো কারো গাঁয়ে এসিড ছোঁড়ে মারছে আবার পিটিয়ে মেরে ফেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজ করছে।
সমাজের এ ঘৃণ্য প্রথাকে প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে।এজন্য পুরুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।তাদের বুঝাতে হবে,তাদেরও বোন আছে, তাদের ঘরেও কন্যাসন্তান হবে।আজ সে যদি যৌতুক নিয়ে কোনো পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে,ভবিষ্যতে তাকেও এমনই করে নিঃস্ব হতে হবে।তাই যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে এবং আইনের স্বচ্ছ প্রয়োগ থাকতে হবে।এছাড়া কোনো নারী যৌতুকের শিকার হলে স্থানীয় প্রশাসন ও মানবতাবাদী সংগঠনকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। নারীকে সমাজের দৃষ্টিতে পণ্য না ভেবে মানুষের মর্যাদায় স্বীকৃতি দিতে হবে।তাই আসুন আমরা সবাই মিলে এই সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে গন আন্দোলন গড়ে তুলি।