লিখেছেন, রাহেনা ইকবাল
তিনি কে ম্যাডাম? এই তো মিজান স্যার। মিজান স্যার, হ্যাঁ। এ কথাটা শুনা মাত্রই শ্রদ্ধায় মাথাটা এমনিতেই নুয়ে পড়ল। যার কথা- সুমন বিপ্লব ও সহকর্মী, ঘনিষ্ট বান্ধবী ও তিনির এক সময়ের ছাত্রী মিনতী আচার্য্যের নিকট থেকে অনেক দিন শুনে আসছি। যাকে দেখার আকুল আগ্রহ মনে নিয়ে একটু সময়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আর সেই ব্যক্তি আজ আমার সম্মুখে। সালাম দেয়া মাত্রই এমন আন্তরিকতার সহিত কোশল বিনিময় করলেন। মনে হল আমি তাঁর শত যুগের শত বর্ষের পরিচিত। মিনিটের মধ্যেই আপন ছোট বোনের আসনে বসিয়ে দিলেন আমাকে। যা ভাষায় ফুটিয়ে কাগজ কলমের মাধ্যমে লিখে বুঝাতে পারছি না।
প্রথমেই সুমন বিপ্লবের কাছ থেকে মিজান স্যার নামে এক ব্যক্তির শত সুখ-দুঃখের কাহিনী শুনতাম আর মনে মনে কল্পনা করতাম যদি ঐ স্যারকে স্বচক্ষে দেখতে পারতাম, তাঁর নিজ মুখ থেকে যদি বিস্তারিত জানতাম শুধু এই আকাঙ্খা। তার কয়েকদিন পর জানতে পারলাম আমার সহকর্মী মিনতী আচার্য্যেরও স্যার। তখন আরও কৌতুহলী হলাম যে এখন আর দেখা করতে অসুবিধা হবে না। এর কয়েকদিন পরেই স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত। আর ঐ দিনেই তাঁর কথা বার্তায় মনে হল শত দুঃখ-কষ্ট প্রবাস প্রবাসী জীবন বুকে পাথর চাপা দিয়ে তিনি এই নশ্বর ভুবনে আছেন। ইচ্ছে হল সারাদিন বসে তার নিজের মুখ থেকেই সব কাহিনী শুনব। কিন্তু প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে আমার একনাগাড়ে ১০ মিনিট বসেও কেউ কেউ কারো সুখ দুঃখের কাহিনী শুনতে পারি না। গল্প গুজব করতে পারিনা। অবুঝ শিশুদের নিয়েই আমাদের খেলাধুলায় মেতে থাকতে হয়। স্যার ১০/১৫ মিনিট বসলেন। আর এই কয়েক মিনিটের মধ্যেই মনে হল তিনি যদি আমাদের কাছে সব কিছু বলতে পারতেন তাহলে নিজেকে কিছুটা হলেও হালকা মনে করতেন। সময় না থাকায় আর অতিরিক্ত শুনা হল না। এর অনেকদিন পর আমাদের স্কুলের এক ট্রেনিং উপলক্ষে তার দোকানের সামনে দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তাই পূর্ব থেকেই কল্পনা করে রাখলাম যে ঐ দিন স্যারকে দেখে আসব। প্রয়োজনের তাগিদে ঐদিন স্যারের কাছে বেশিক্ষন থাকতে পারলাম না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আসতে হলো। আর ঐদিন স্যার আমার মোবাইল নাম্বার রাখলেন। মাঝে মধ্যে সংবাদ নিবেন। তার অনেকদিন পর হঠাৎ একদিন রাতে স্যার ফোন করলেন ভালো মন্দ খবর নেয়ার পর বললেন, তিনির ভাগিনা ভাগিনীর বিবাহ উপলক্ষে লেখা দেবার জন্য। কিন্তু শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দিতে পারলাম না সময়ের সংকীর্ণতার কারণে, যার জন্য নিজে নিজেই অনেক আঘাত অনুভব করছি যে কেন লিখতে পারলাম না। মনে মনে স্যারের কাছেও লজ্জিত। কিন্তু অদম্য কৌতুহল জাগল যে ঐ অসাধারন ব্যক্তির কি লিখে কিভাবে ভাষায় ফুটিয়ে প্রকাশ করবো। তা ভেবেই চলছি। তাই কলম হাতে নিতেই তিনির প্রতিচ্ছবি শুধু মনের ফ্রেমে ভেসে উঠে। তাঁর স্বরচিত তাঁর সম্পাদিত যত বই পড়ছি সব কিছুতেই যেন জীবনের গল্প আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের ছাপ লেগেই আছে। আমার বিশ্বাস স্যারের ভবিষ্যৎ ফুলের মত প্রস্ফুটিত হবে। এই লেখা লেখির মাধ্যমেই স্যার অমর হয়ে এই নশ্বর ভুবনে থাকবেন। স্বজনরা ভুললেও পৃথিবীর অন্য সবাই ভুলবে না। সব ক্ষেত্রে সফলতা স্যারের অর্জিত হলেও সাংসারিক ক্ষেত্রে শুধু ব্যর্থতা। শ্রুত কাহিনীর মর্মার্থে একজন নারী হয়ে অপর নারীকে জানাতে হয় শত ধিক্কার।